শ্রী শ্যাম সুন্দর গোস্বামী

আধুনিক জীবনের প্রয়োজনে গৃহীত  শ্রী এস এস গোস্বামীর শিক্ষাগুলি সর্বাধিক মৌখিকভাবে প্রচারিত ছিল, প্রাচীন যোগ ঐতিহ্যের ভিত্তি করে। গোস্বামী তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ( ১৩ অক্টোবর ১৯৭৮ সাল) নিরবিচ্ছিন্নভাবে এ কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

শ্রীশ্যামসুন্দর গোস্বামী

তিনি তাঁর সহকারী মিসেস করিন স্ক্যাল্যান্ডারের সাথে হঠ যোগ ক্লাস পরিচালনা করতেন। ক্লাস পরিচালনা ছাড়াও,  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাঝে মাঝে যোগ প্রদর্শনের মাধ্যমে নিয়মিত বক্তৃতা দেওয়ার সাথে সাথে তিনি যোগ বিষয়ক গভীর গবেষনামূলক কাজ করেছিলেন  ।

২০১০ সালে শ্যাম সুন্দর গোস্বামীর ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারটি তার অনন্য যোগ সাহিত্যের সংকলন সহ সুইডেনের লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হয়েছে ।

২০১১ সালের মে মাসে গোস্বামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এই খ্যাতিমান মানবের আধ্যাত্মিক চিন্তার ঐতিহ্য অনুসারে যোগের বিকাশকে স্থির করার লক্ষ্যে। ফাউন্ডেশন এই ওয়েবসাইটটিকে প্রতিষ্ঠা করেছে প্রাসঙ্গিক যোগ সাহিত্য প্রকাশের চেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে

সংক্ষিপ্ত জীবনী

বিগত শতাব্দীর শুরুতে পশ্চিমে শহশ্রাব্দ-পুরাতন যোগ রীতি প্রচলিত হয়েছিল। যোগের সর্বাগ্রে ভারতীয় প্রচারক ও প্রকাশকদের মধ্যে ছিলেন শ্রী শ্যাম সুন্দর গোস্বামী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্য ডঃ দীনবন্ধু প্রামাণীক ।

উত্তরবঙ্গের শান্তিপুরে জন্মগ্রহণকারী, একজন সংগীতশিল্পী, দার্শনিক এবং শারীরবিদ যিনি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। শ্রী গোস্বামী ৭০০ বছরের পুরানো পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ ছিলেন, জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতার মিশ্রণে জীবনযাপন করেছিলেন। । তাঁর পূর্বপুরুষদের একজন রাজা হতনাবতির গুরু এবং বিখ্যাত ভক্তি যোগী চৈতন্যেদেবের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী ছিলেন। এখনও ভারতে গোস্বামী নামটি বিশেষভাবে যোগ শিক্ষার সাথে জড়িত।

শ্রীশ্যামসুন্দর গোস্বামী (১৮৯১-১৯৭৮)

শ্রী গোস্বামী তাঁর পুরো জীবন যোগ সাধনায় উৎসর্গ করার কারণ ছিল শুধু তাঁর আধ্যাত্মিক পারিবারিক ঐতিহ্য নয়, শৈশবকাল থেকেই ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ও একটি কারণ। তিনি তৎকালীন সুপ্রসিদ্ধ শিক্ষিত ১১০ বছর বয়সী শারীরতত্ত্ববিদ কালী সিংহের উৎসাহে ১৭ বছর বয়সী কিশোর তাঁর অধীনে দুবছর কঠোর যোগিক অনুশীলনগুলি করে শরীরকে সুস্থ এবং শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে সফল হয়েছিলেন।

সেই সময়কার সুপ্রসিদ্ধ অধ্যাপক রামমূর্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুবা বয়সে নিজেকে যোগব্যায়ামে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে শ্রীগোস্বামী অসাধারণ শক্তির সঞ্চার করেছিলেন , যেমন বুকে হাতিকে ধারণ করতে সমর্থ ছিলেন। 

সেই সময় উচ্চশক্তি সম্পন্ন হঠ যোগের এক মহান গুরু বালক ভারতীর সম্মুখীন হন গোস্বামী বয়স তখন তাঁর প্রায় বিশ বছর। যোগী তাঁকে হঠ যোগে দীক্ষা দিয়েছিলেন এবং নিজেকে তাঁর শিষ্যের কাছে উন্মোচিত করেছিলেন। যোগিক ঐতিহ্যের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তিনি তাঁর গুরু উপস্থিতিতে অনুশীলন করেছিলেন এবং যোগ্যতা লাভ করেন নিজ পথ চলার, তখন বালক ভারতী হিমালয়ে গমন করেন ।

কয়েক বছর পরে, তিনি একজন মহান লয় যোগ মাস্টারের (শ্রীদ্বীজপদ রায়) সাথে দেখা করেন যিনি তাকে দীক্ষা দেন ও চক্র এবং ধ্যান বিষয়ক দিক নির্দেশ করেন। তার পূর্বের স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, শ্রী গোস্বামী একটি অসাধারণ মানসিক ও শারীরিক (psychophysical) শক্তির বিকাশ করেছিলেন।

প্রায় সাত দশক ধরে শ্রী গোস্বামী তাঁর পুরো সময়টাকে যোগের বিশাল ক্ষেত্রে অধ্যয়ন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শিক্ষা দেওয়ার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তার গবেষণায় শারীরবিদ্যা (Anatomy) ফিজিওলজি (Physiology), স্নায়ুবিদ্যা (Neurology), মনোবিদ্যা (Working psychology), শারীরিক শিক্ষা (Physical Education)এবং পুষ্টি (Nutrition) ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি সর্বদা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলির বিকাশ এবং তার অন্তর্নিহিত মূল বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে একটি বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের প্রয়োগাত্মক শিক্ষার বিকাশ করতে আগ্রহী ছিলেন।

তিনি তাঁর উন্নত শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ যোগের যুক্তিবাদীতা, দৈহিক শক্তির বিকাশ এবং আধ্যাত্মিকতার সাথে গভীর চিন্তাভাবনা, সুচারুভাবে শেখার এবং কর্মে পুনরায় প্রয়োগ করতে সক্ষম হন।

তিরিশ বছর শিক্ষাদান করেন শ্রী গোস্বামী তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত যোগ ইনস্টিটিউটে (১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত)।  তাঁর শিষ্য প্রামানিকের সহিত তিনি যোগ-বিজ্ঞানে লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সমাজের সমস্ত শ্রেণীর প্রবেশাধিকার দেওয়ার মহৎ ধারণা নিয়ে সমগ্র ভারত ভ্রমণ করেছিলেন। তাঁর বক্তৃতা এবং প্রদর্শনগুলি মূলত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষত চিকিৎসক সংস্থা, তৎকালীন শাসক রাজকুমার, মহারাজা (যাদের মধ্যে একজন তাকে “বাংলার সিংহ” বলে অভিহিত করেছিলেন) এবং রাজা, মন্ত্রীরা এবং অন্যান্য অনুরূপ আধিকারিকদের দিকে নির্দেশিত হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যে ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রীকৃষ্ণ মেননের (পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হন ) অনুরোধে শ্রী গোস্বামী ১৯৪৯ সালের সুইডেনের লিঙ্গিয়াডেনে শরীর চর্চা সম্পর্কিত কংগ্রেসে (World Congress For Physical Culture) স্বদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেন যেখানে ৬৪ টি দেশ অংশ নিয়েছিল।

তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্য প্রামানিকের সহায়তায়, শ্রী গোস্বামীর বক্তৃতা এবং যোগ প্রদর্শন বিশ্বে প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিল, সুইডেনের স্টকহোমে সুইডিশ চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদল তাকে যোগব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। গোস্বামী যোগ ইনস্টিটিউট সম্ভবত ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন যোগ শিক্ষাকেন্দ্র ।

তাঁর সবচেয়ে যোগ্য শিষ্য দীনবন্ধু প্রামানিকের সাথে শ্রী গোস্বামী এর আগে বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং হঠ যোগের শিল্প ও বিজ্ঞান প্রদর্শন করেছিলেন বিপুল জনতার সামনে। পুরো ভারত জুড়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ইউরোপে, বেশিরভাগই মেডিকেল বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ যোগব্যস্ত যাত্রা সুইডেনে শেষ হয়েছিল যখন চিকিৎ সকদের একটি প্রতিনিধি দল তাকে সুইডেনের রাজধানীতে বসতি স্থাপন এবং যোগ শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী, শ্রী শ্যাম সুন্দর গোস্বামী ৮৭ বছর বয়সে ১৯৭৮ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। একজন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকারী, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনির্বচনীয় শিক্ষায় ভরা যোগীর এক অসাধারণ কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটল। তিনি যোগের একটি এনসাইক্লোপিডিয়াও প্রস্তুত করেছিলেন, যা দুর্ভাগ্যক্রমে অচিহ্নিত ছিল। তবে, যোগের মাস্টারের মৃত্যুর আগে কেবল তাঁর লিখিত লয়যোগ প্রকাশিত হতে পেরেছিল । তবে, ব্যাসিল পি ক্যাটোমারিসের ‘ফাউন্ডেশনস অফ চক্র’ যোগ  বইটিতে যোগ মাস্টারের শিক্ষার সংশ্লেষণ পাওয়া যায় ।

শ্রী গোস্বামীকে যোগ বিজ্ঞানের আধুনিক সময়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং সর্বাগ্রে অগ্রদূত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এখনও বাংলার এই সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি বহু শিষ্যের হৃদয়ে এক অনুপ্রেরণামূলক উৎস হিসাবে পরিগণিত হন।

শ্রী গোস্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যগণ, মিসেস কারিন স্ক্যাল্যান্ডার ( ২০০৯) এবং বেসিল ক্যাটোমারিসের পরিচালনায় অব্যাহত ছিল। আজ সুইডেনে যোগ ক্লাসের নেতৃত্বে বেসিলের ঘনিষ্ঠ শিষ্য রেনে লর্ড এবং ইভা ওল্যান্ডারসন, রয়েছেন আরিয়ান ক্যাটোমরিস যিনি নিয়মিত ক্লাস ছাড়াও প্রাক-মাতৃত্ব কোর্স এবং আয়ুর্বেদিক ম্যাসেজেও বিশেষ পারদর্শী।


শ্রী গোস্বামী আধ্যাত্মিক পূর্বপুরুষ

এখনও গোস্বামী নামটি প্রায় ৭০০ বছর ধরে উত্তরবঙ্গে সুপরিচিত। শ্রী গোস্বামীর পূর্বপুরুষদের একজন রাজা হত্তনাবতীর গুরু ছিলেন যিনি এমন এক সময় ছিলেন যখন মহান ভক্তি যোগী ও সংস্কারক চৈতন্যদেবের আবির্ভাব হয় (১৪৮৬-১৫৩৩)। তাঁর জীবন অবসান হয় (কিংবদন্তী বলে যে পুরিতে শ্রীচৈতন্যের দেহ রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়)।  বিখ্যাত ভক্তি যোগী চৈতন্যদেব তাঁর আধ্যাত্মিক দায়িত্ব রাজার গুরু গোস্বামীর হাতে দিয়েছিলেন। তবে শ্রী গোস্বামীর পূর্বপুরুষেরা চৈতন্য উত্তরাধিকার গ্রহণের আগেই পরিচিত ছিলেন । শ্রী গোস্বামী ভাষ্য তাঁর প্রাচীন বংশের প্রশংসনীয় উৎস হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

মা শান্তি দেবী (1904-2002)

শ্রী গোস্বামীকে প্রভাবিত করার জন্য অন্যতম প্রধান যোগী বালক ভারতী ছিলেন, তিনি শান্তিপুরের গোস্বামী পরিবারের বাড়ির নিকটে বসবাসকারী অসাধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন যোগী ছিলেন ।

তাঁর আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের সময়, শ্রী গোস্বামীর অন্য একজন যোগী মাস্টারের সাথে সাক্ষাৎ হয় , যিনি তাকে চক্রের বিজ্ঞান – লয়যোগ – (যাকে কুণ্ডলিনী যোগ নামেও অভিহিত করা হয়) শিক্ষা দিয়েছিলেন, এটি হঠ যোগ এবং রাজ যোগের মধ্যবর্তী পথ , তিনি এই লয়যোগের মাস্টার যিনি পরে মা শান্তি দেবীকে দীক্ষা দিয়েছিলেন এবং বিয়ে করেছিলেন।

১৯০৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর দক্ষিণবঙ্গের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, ১১ বছর বয়সে মা শান্তি দেবীকে তাঁর স্বামী, পাবনা জেলা স্কুলের একজন শিক্ষক শ্রী দ্বীজপদ শর্মা রায় ( লয় যোগ মাস্টার) নিয়ে এসেছিলেন।  তাকে দীক্ষা দেওয়ার আগে আট বছর তাকে ব্রহ্মচর্য নিয়ম পালন করিয়েছিলেন । সেই সময় থেকেই, শিক্ষক তার তরুণ শিষ্যাকে হিন্দু ধর্মগ্রন্থে (শাস্ত্র) উল্লিখিত পূজন, ভজন, জপ – এর সাথে সম্পর্কিত ভক্তির পথ এবং এর সাথে সম্পর্কিত অনুষ্ঠানগুলি শেখাতে শুরু করেছিলেন।

শ্রী দ্বীজপদ শর্মা রায় “মাস্টারজী” (1870-1935)

লয় যোগ ‘মাস্টারজী’ দেহত্যাগ করেন তখন গুরুপত্নী মা শান্তি দেবীর বয়স তিরিশের কোটায় ।এক শিশুপুত্র সন্তান নিয়ে বিধবা হন ।

পরবর্তী জীবনে আরেকটি দুর্ভাগ্য যোগিনীকে আঘাত করে তার ছেলেটি হঠাৎ এক মর্মান্তিক গাড়ী দুর্ঘটনায়ে মারা যায়। তাঁকে একা তাঁর বৌমা এবং তিন জন নাতি ও নাতনীর দেখাশোনর দায়িত্ব নিতে হয়ে ছিল। সমৃদ্ধ যোগিনী মা শান্তি দেবীর জীবন আধ্যাত্মিক অনুশীলন এবং তার মধ্যেকার দায়িত্বের উচ্চ বোধের মধ্যে বিভক্ত হয়ে ওঠে, মধ্যপথের আধ্যাত্মিক সন্ধানের একটি অসাধারণ প্রতিনিধি হিসাবে।

শ্রী শ্যাম সুন্দর গোস্বামী এবং তাঁর বিশ্বস্ত ও উদার শিষ্যদের সহায়তায় মা শান্তি দেবীকে গোপালপুরে এক টুকরো জমি কিনে দেন যেখানে বাড়ি করে তিনি তার পুত্রবধূ আরতি এবং তিন নাতি নাতনি দেবকুমার, শিবানী এবং শর্বাণীর সাথে থাকতেন।

সাধারণভাবে অশিক্ষিত কিন্তু আধ্যাত্মিক জ্ঞান দ্বারা পরিপূর্ণ, গোপালপুরের যোগিনী ছিলেন একজন বাস্তববাদী এবং মানবতাবাদী। মা শান্তি দেবী তাঁর পুরো জীবন জুড়ে বিরল সমতা প্রদর্শন করতেন। তিনি তাঁর পরিবারের সদস্য, দেশী ও বিদেশী শিষ্যদেরকে তার নিজের সন্তান হিসাবে সমানভাবে দেখতেন – সমতা এবং সমতার দৃষ্টি (সম-দর্শন) যা ভাগবত গীতা অনুসারে সাধিত যোগী (নী) র বৈশিষ্ট্য (II, 48; V.18) ; VI.32)।

“তাঁর মতো মহান আত্মারা কখনই ত্যাগ করেন না, তবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সূক্ষ্ম ও শক্তিশালী উপায়ে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা দেন। আমাদের কেবল তাদের সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে, এবং তিনি যেখানে থাকবেন, আমাদের প্রেরনা দেবেন এবং পথ দেখাবেন ”একজন আধ্যাত্মিক প্রশংসক বলেছেন।


শ্রী গোস্বামীর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী

কারিন স্ক্যাল্যান্ডার

প্রায় তিরিশ বছর ধরে, কারিন স্ক্যালান্ডার ছিলেন শ্যাম সুন্দর গোস্বামীর নিকটতম শিষ্যা। তাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল যখন শ্রী গোস্বামী সুইডেনের লিঙ্গিয়াডেনে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক 1949 ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।

কৃষ্ণা
কারিন স্ক্যালান্ডার (1920-2009)

এই সময়েই যোগ মাস্টার শ্রীগোস্বামী কে বিশেষভাবে চিকিৎসা প্রতিনিধিরা সুইডেনে তাঁর যোগ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনুরোধ জানান।  এই প্রস্তাব গ্রহণ প্রশাসনিক দিক থেকে তখন সুবিধাজনক ছিল না।

তিনি এই অনন্য শিক্ষার প্রসারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন, তাই কারিন স্ক্যাল্যান্ডার স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবেদন করেন সুইডিশ সরকারের কাছে যাতে শ্রী গোস্বামীকে একটি আবাসনের অনুমতি দেওয়া হয়।  তার প্রচেষ্টা অবশেষে সফল হয়েছিল এবং প্রয়োজনীয় অনুমতি অনুসারে ভারতীয় নাগরিককে তার গবেষণামূলক কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি সুইডেনে যোগ শিক্ষা দেওয়ার অনুমোদনও দেওয়া হয়েছিল।

উৎসাহী এই ছাত্রীটি তার আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শণকারীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। বিশেষত সুইডেনের রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যোগ প্রদর্শন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন ।

কৃতজ্ঞ, শিক্ষক কিছু সময়ের পরে কারিন সাল্যান্ডার কে তার তত্ত্বাবধানে নবীনদের জন্য তাঁর নিজস্ব আসন কোর্সগুলি পরিচালনা করার জন্য অনুমতি প্রদান করেন। এই কোর্সগুলি 2007 পর্যন্ত তার জীবনের প্রধান পেশা ছিল।

29 শে ডিসেম্বর সুইডেনের গ্রেসমার্কের গির্জায় অনুষ্ঠান থেকে।

কারিন শাল্যান্ডার একজন অবিস্মরণীয়, দৈহিক বিকাশ এবং নিয়ন্ত্রণ সহ সফল ছাত্রী ছিলেন। তিনি উদাহরণস্বরূপ মাস্টার বস্তি শিখেছিলেন, অভ্যন্তরীণ পরিষ্কারের জন্য একটি উন্নত পদ্ধতি (colonic auto-lavege), যা পাশ্চাত্য মহিলা অনুশীলনকারীদের দ্বারা খুব কমই নিয়ন্ত্রিত হয়।

তিনি মা শান্তি দেবী কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তিগত মন্ত্র তাঁর শিক্ষক শ্রী গোস্বামী দ্বারা যোগ রীতিতে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।

২০০৯ সালের ৭ ই ডিসেম্বর গ্রেসমার্কে শান্তিপূর্ণভাবে দেহ ত্যাগ করার কয়েক বছর আগে কারিন সালান্ডার তার শিক্ষামূলক কার্যক্রম থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ যোগ শিক্ষা ও বিস্তারের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।

বাসিল পি ক্যাটোমরিস

গোস্বামীর প্রিয় শিষ্যদের মধ্যে বাসিল ছিলেন, যিনি সম্ভবত সেই সময়কার এমন একজন অসাধারণ পাশ্চাত্য ছাত্র ছিলেন যে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খাঁটি যোগ শিক্ষকের পাদদেশে ধৈর্য ধরে ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে অমূল্য জ্ঞান অর্জন করেছেন ।

বিশুদ্ধানন্দ গিরি
Basile Catoméris (1930-)

Consultant in Intellectual Property হিসাবে আন্তর্জাতিক পেশা ও সমান্তরালভাবে তাঁর দীর্ঘ যোগ শিক্ষানবিশ তাকে গোস্বামী যোগ ইনস্টিটিউটের কেন্দ্রস্থলের নিকটে নিয়ে আসে যা তাকে মাঝে মাঝে কেবল তার গুরুর নিজস্ব যোগ ক্লাসে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগই দেয়নি, তাঁকে সহায়তা করার সুযোগ দেয়। যাকে এক মহারাজ “বাংলার সিংহ” নামকরণ করেছিলেন সেই ব্যতিক্রমী উৎসর্গীকৃত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানোর জন্য গর্বিত, যিনি সারা জীবন সারা পৃথিবীর হাজার হাজার শিষ্যকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর সমগ্র জীবন যোগ বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি উৎসর্গ করেছেন ।

১৯৭৮ সালে ৮৭ বছর বয়সে তাঁর গুরুর মৃত্যুর পূর্বে দীক্ষিত হন, এই ধৈর্যশীল এবং কঠোর পরিশ্রমী শিষ্য ২১ বছর অবিরত অধ্যয়ন এবং “মানুষের বিজ্ঞান” বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে সংশোধিত যোগ ঐতিহ্যের অনুশীলনের পরে ।

কয়েক বছর পরে, বাসিল তাঁর প্রয়াত গুরুর আধ্যাত্মিক মা, শান্তি দেবী, ঈশ্বরে উৎসর্গীকৃত বাঙালি গৃহস্থ এবং যোগিনী যিনি লয় এবং ভক্তি যোগের পথ অনুসরণ করেছিলেন, তাঁর সাথে দেখা করতে ভারতে গিয়েছিলেন।

প্রথম সাক্ষাতের দিন তিনি বাসিলকে সম্বোধন করেছিলেন: ‘বীরাচারি’ । বলেছিলেন তুমি এখানে তোমার গুরুর আধ্যাত্মিক মায়ের কাছে শুধু দেখা করতে আসোনি , এসেছ ব্রহ্মমন্ত্র দীক্ষা পাওয়ার জন্য। আমি আগে তোমার গুরুকে ব্রম্ভ মন্ত্র দীক্ষা ও আধ্যাত্মিক নাম জ্ঞানানন্দ গিরি দিয়েছিলাম। এটি ছাড়া অন্য শিষ্যদের দীক্ষা দেওয়ার অধিকারী হওয়া যায় না।

এই ব্যতিক্রমী মহিলা মা শান্তি দেবী যিনি বাসিলকে সর্বোত্তম দীক্ষা দান করেছিলেন। এই নতুন শিষ্যকে তখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্যান্য চেলাদের দীক্ষা দান এবং দীর্ঘ সময় শিক্ষানবিশের অধীনে তাঁর অর্জন করা তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান স্থানান্তর করার অনুমতি প্রদান করেছিলেন ।

এই দুজন উল্লেখযোগ্য যোগব্যক্তিত্ব যারা ব্যাসিলকে তাঁর দীর্ঘ আধ্যাত্মিক সন্ধানের প্রাপ্ত জ্ঞান এবং অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশের জন্য স্পষ্টভাবে বলেছিলেন।


প্রশংসাপত্র

“শ্যাম সুন্দর গোস্বামী হ’ল আধুনিক সময়ে যোগের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ।”

শ্রী করুণাময় সরস্বতী

“আমার হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে আমি এই গৌরবময় আত্মার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি…। তিনি এমন একজন উদাহরণ ছিলেন যিনি মনোনিবেশ করেছিলেন প্রয়োজনীয় বিষয় যা হল – জীবন নিজেই…। তার উপস্থিতিতে মিথ্যা বলা বা নিখুঁত সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়া প্রশ্নের বাইরে ছিল … তাঁর নৈতিকতার বোধটি আমার পরিচিত সবার চেয়ে উপরে; তিনি সঠিক আচরণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত …।

তাঁর দৃঢ়তা এবং তাঁর আমাকে শেখানো সত্যের প্রতি ভালবাসা থেকে আমি যে শক্তি পেয়েছি তা ছাড়া আমি আমার অসুবিধাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারতাম না। “

অধ্যাপক গুনার অ্যাডলার-কার্লসন

“অধ্যাপক” (গোস্বামী) বৈজ্ঞানিক তদন্তের জন্য সত্যই আবেগ এবং তাঁর গবেষণার বিষয়টির পদ্ধতিবদ্ধকরণ দ্বারা অ্যানিমেটেড হয়েছিল। আমি সর্বদা তাঁর উপর নির্ভর করতে সক্ষম হয়েছি, এমনকি কোনও সঙ্কট বা অসুস্থতার মাঝেও; সর্বদা মনোযোগী, তিনি আমার সমস্যাগুলি সম্পর্কে আমার কথা শোনেন এবং আমাকে তাঁর আলোকিত পরামর্শ এবং প্রায়শই তার টেবিলে আতিথেয়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রতিবার যখন আমি তাকে দেখতে এসেছি, আমি ভবিষ্যতের জন্য একটি দুর্দান্ত আশা, আনন্দ এবং আনন্দের তীব্র অনুভূতিতে স্থানান্তরিত হয়েছিলাম।

ডাঃ উলফ জ্নসন

“তিনি শক্তির এক অভিনব স্মৃতিস্তম্ভ, এবং আমরা তাঁর পায়ের কাছে বসে শিখতে আগ্রহী…।  আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই সময়টি কোনও সন্দেহ ছাড়াই তাঁর গালিচাতে ছড়িয়ে একটি কম্বলে বসে ছিল, যা আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্তগুলি অনুভব করেছি। “

ক্লড কায়াত, লেখক

“… আমি একটি খুব বিশেষ এবং প্রায় জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশের স্মৃতি পেয়েছি যা ছাত্রদের ছোট্ট বৃত্তের পাশাপাশি গোস্বামীর তীব্র ব্যক্তিগত ক্যারিশমাতে রাজত্ব করেছিল। আমার কাছে, তাঁর পাঠগুলি বেশিরভাগই একটি বার্তা শোনার জন্য একধরনের অনুশীলন ছিল যা তিনি পৃষ্ঠ এবং তার ভিতরে উভয়ই দূরত্ব দান করার চেষ্টা করেছিলেন। ”

ডঃবিরগীটা অলিভক্রোনা

“তাঁর পুরো ব্যক্তিত্ব সমানভাবে যোগিক উত্সাহের আদর্শ (দেব দেহ) এবং প্রাচীন গ্রিসের ধারণাগুলি অনুপ্রাণিত করেছে: শক্তি, প্রজ্ঞা, সাহস এবং সৌন্দর্য – যাকে আমরা জীবন বলি…। আমার দীর্ঘ জীবনের পুরো সময়কালে, তিনি একজন মাস্টার, পরামর্শদাতা এবং বন্ধু – একজন গুরু, আধ্যাত্মিক পিতা ছিলেন ”

বিশুদ্ধানন্দ গিরি (বেসিল ক্যাটোমরিস)